-এক বাঙ্গালীর বাঙালিপনা |
বিয়ের ২ মাসের মধ্যে আমার
অবিবাহিত জীবনে একা থাকার সমস্থ অভেস গুলো যখন ঘেঁটে গেছে, অর্ধাঙ্গিনী তার বাপির
হাত ধরে বাপের বাড়ি রওনা দিলেন| রাত্রিতে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে দরজা নারা দিতে যখন
দরজা খুললো না তখন মাথায় এলো দরজা খুলে হেলমেট আর ব্যাগ নেবার মানুষটি ভেতরে নেই |
অগত্যা নিজেকেই চাবি খুলে প্রবেশ করতে হলো | এই প্রথম বার নিজের বাসস্থানটিকে অনেক
বড় বড় মনে হয়েছিল | বিবাহ পরবর্তী এই একাকিত্য ঠিক মেনে নিতে পারছিল না মনটা | এক
একটা সপ্তাহ সমাপ্তি কাটানো বেশ কঠিন হয়ে উঠছিল | এমন সময় মনে পড়ল রাজধানী তে
ভ্রমন কালীন পরিচয় হওয়া ৩ বন্ধুর কথা | ফোন করতেই আমন্ত্রণ পাওয়া গেল | আমিও এটার
জন্যই অপেক্ষা করছিলাম |
এক শনিবারের বিকেলে রওনা
দিলাম অনির্বানদার বাড়ি | ধীরে ধীরে অনির্বানদার সব সাঙ্গপাঙ্গরাও হাজির হলো |
আমার কাছে পুরনো বলতে অনির্বানদা এবং বিমান বাকি অভিক , গোগই , দৈপায়্ন (ডি ঘোষ) আর তেম্বুর্নে এদের সাথে নতুন বন্ধুত্ব | আর এক
পুরনো প্রেমিক বন্ধু সৌগত কোনো এক গোপন অসুস্থতার কারণে উডল্যান্ড হসপিটালে ভর্তি
| তাই সে অনুপস্থিত | সুরু হলো রান্না আর গানের আসর | রান্নার ফাঁকে অভিক এর
গলার রবীন্দ্র সঙ্গীত, গোগই-এর গলায় পুরনো দিনের হিন্দী গান আসর জমিয়ে দিয়েছিল | এর
সাথে আমরা যখন দু একটা ব্যান্ড এর গানে গলা মেলাবার চেষ্টা করছি, ডি ঘোষ এর চিতকার
পুরো জিনিসটাকে একটা আলাদা মাত্রা দিচ্ছিল | মনে হছিলো সত্যজিত রায় বেঁচে থাকলে “গুপি
গায়েন বাঘা বায়েন” সিনেমাটা আবার করতেন, সবই একই থাকত শুধু ভূত এর গলা টা ছাড়া |
তবে নমুনা টির সাথে কেন জানি না সুকুমার রায় এর “পাগলা দাশু” এর সাথে খুব মিল
পাছিলাম |
রাত্রিতে কাসুন্দি মিশ্রিত
আলু ভাতে আর কচি পাঠার মাংসের সাথে ভাত এক আলাদাই আমেজ এনে দিল |
মনের মধ্যে বাঙালি ভাব জেগে
উঠলো | আর উঠলো বাই তো মক্কা যাই| বসে বসে ঠিক হয়ে গেল রবিবার হজখাস আর চিত্তরঞ্জন
পার্ক ঘুরতে যাওয়া|
রবিবার সকাল বেলা ফিরলাম অনির্বানদার বাড়ি থেকে| দুপুরের খাবার খেয়ে বসেছি |
ক্রিং ক্রিং ক্রিং
অনির্বানদা - “ কি রে শরীর
ঠিক আছে তো?... আজ যাবি তো?”
“হাঁ, যাবনা মানে, সারে চারটে নাগাদ স্টেসনে পৌছে যাব |” – আমি |
ঠিক সময়ে ৩ জন আমি, অনির্বানদা আর অভিক পৌছে গেলাম সেকেন্দ্রাপুর স্টেসন, সেখান থেকে মেট্র তে হজখাস| স্টেসন থেকে এক অটোরিক্সাতে রওনা
দিলাম হজখাস ভিলেজ| রাস্তায় পড়ল জগন্নাথ দেবের মন্দির| অটো ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা
করাতে বলল “পেসেঞ্জাররা আমাদের থেকে বেশী জানে, তাই আমরা কিছু বলি না”| এতদিন
জানতাম ক্লাইন্টকে ইমপ্রেস করার জন্য বেশী বলতে হয়, এ তো দেখি উল্টো | যাই হোক
পৌছালাম হজখাস ভিলেজ| কিন্তু কোনটা আসল ভিলেজ সেটাই খুঁজে পাছিলাম না|
হঠাথ চোখে পড়ল একটি লাল ছোট
স্কার্ট পরা মেয়ে তার পুরুষ সঙ্গীর কাঁধে মাথা রেখে চলছে বা চলার চেষ্টা করছে আর
সাথে চলছে তাদের ছোট খাটো কিছু কার্যকলাপ যেটা পথযাত্রী সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ
করছিল, আমরাও বাতিক্রম না| হঠাথ অনির্বানদা বলে উঠলো “ আমাদের লক্ষ্য হজখাস ভিলেজ
, লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া ভালো না|” অগত্যা গ্রুপ এর বয়জেষ্ঠর কথা তো মানতেই হয় |
খুঁজতে খুঁজতে এক প্রান্তে
গিয়ে পৌছালাম, সামনে এক কেল্লা এর মতন কিছু একটা দেখা যাচেছ৷ এক পুলিশকে জিজ্ঞাসা
করাতে বললেন এটাই ভিলেজ | কথাটা ঠিক পছন্দ হলো না কারণ জায়গাটা আমাদের মন কে
সন্তুষ্ট করতে পারে নি, তবে একটা জিনিস ছাড়া ;)| ফেরার পথে নজরে এলো এক বাগান,
তার এক আরাম কেদারা তে বসে এক যুবক তার সঙ্গিনীকে গিটার শেখাচ্ছে | চারিদিকে তখন
অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে শুধু এক কৃত্রিম আলো তাদের উপর পরছিল| এই আলো আঁধারী সত্যিই
অসাধারণ লাগছিল| অনির্বানদা এগিয়ে গেল তার ক্যামেরা নিয়ে| আমিও থেমে থাকতে পারলাম না
| অভিক আমাদের দুজনের কান্ড দেখতে লাগলো |
আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো চিত্যরঞ্জন পার্কে গিয়ে
রাত্রের খাবার খেয়ে বাড়ি ফেরা |
চিত্যরঞ্জন পার্কে পৌছে
“কাকু ৩ টে চা দেবেন” – অরিন্দমদা
“আমাকে একটা বিস্কুট দেবেন
তো” – আমি
অভিক - “আমারও চাই|”
অনির্বানদা ও গলা মেলালো |
অনেক দিন পরে বাঙ্গালী কম দুধের
চা আর বেকারী বিস্কুট যেন অমৃত|
অনির্বানদা আর অভিক এখানে
পুরনো তাই চা কাকুর সাথে বিশেষ বন্ধুত্ত্ব| আমি এখানে নতুন, যেন চা কাকুর ও অথিথি|
তাই আমার কাছে চা এর টাকা নিতে ও অস্বীকার করলো|
এই আন্তরিকতা আমাকে আরো
আবেগ প্রবন করে তুলল|
কাছেই কালী মন্দির, সেখানে পৌছে দেখলাম বাচ্চা দের একটা
অনুষ্ঠান হচ্ছে | ১ বছরের দেল্হী জীবনে এই প্রথম এরম অনুষ্ঠান দেখলাম| আমার
উতফুল্ল মনের মধ্যে বাঙ্গালী মিটার টা বেড়েই চলেছিল| বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে এবার
রাত্রির খাবার পালা|
অন্নপূর্ণা হোটেলে পৌছালাম
|
“দাদারা কি খাবেন? ইলিশ
মাছের পেসাল থালি আছে, দেব নাকি?”
“আর দেরী কেন দিয়ে দাউ” –
অভিক |
ইলিশ মাছ, মুড়ি ঘন্ট আর
ঝুরি ঝুরি আলু ভাজা দিয়ে ভাত | পেটপুজো টা ভালই হলো |
কিন্তু হলো এক সমস্যা| আমি
কড়ি আঙ্গুল দেখালাম|
অনির্বানদা - “এটা তো সত্যিই সমস্যা | আমি এখানে কোনো সুলভ কম্প্লেক্স দেখি নি| আজতো তোকে পুরো বাঙ্গালী ই হতে
হবে| আই আমার সাথে|”
একটা গলি রাস্তার ধরে এক থাম্বা
দেখিয়ে বলল “যা, কাজ টা সেরে ফেল| আমি আর অভিক দুজনে দু দিকে নজর রাখছি|”
আমি একটু ইতস্তত করছিলাম
দেখে অনির্বানদা বলল “কি রে, যা!”
“ধরা পড়লে কান ধরে উঠবস
করাবে না তো আবার” – আমি|
প্রথমে একটু ইতস্তত করলেও
তলপেটের চাপে এগিয়ে যেতেই হলো|
অতি সাবধানে কাজটুকু সেরেই
দে ছুট| ছুটতে ছুটতে ভাবলাম আজকের দিনটা এটার জন্যই পূর্ণ হলো|
ষোলআনা বাঙালিয়ানা|